Categories Uncategorized

Parashurameswar Temple, Bhubaneswar

This is the picture of Parashurameswar Temple, Bhubaneswar. I visited this Temple in the last week of April. This is one of the oldest and most well preserved temples in Bhubaneswar. It was probably built around 650 AD.

Features of old Kalinga Architecture are present here. Though the Temple is dedicated to Lord Shiva, it has depictions of Sakta Deities. This is the first Temple in Bhubaneswar where we find the whole panel of Saptamatrikas.

Categories Uncategorized

শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে।

আজ ২২শে শ্রাবণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস (৭ই আগস্ট , ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দ; ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। ভরা শ্রাবণে তিনি চলে গেলেন। কি রেখে গেলেন তিনি আমাদের নিত্যদিনের জীবনে !

শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের ‘পরে, বুকের ‘পরে।।

— এর থেকেই তো আমরা প্রাত্যহিক সুখ-দুঃখকে অতিক্রম করে বেঁচে থাকার শক্তি সংগ্রহ করছি। তাই ‘সুরে ও কথায়’ রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেতে চেষ্টা করব এই লেখার মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে।

বাঙালী জাতির অসীম সৌভাগ্য যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মেছিলেন কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরপরিবারে (জন্ম ৭ই মে, ১৮৬১; ২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)। কিন্তু এই পরিবারটি এল কোথা থেকে, কিভাবে গড়ে উঠল এই ঐতিহ্যবাহী ঠাকুর পরিবারটি, রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাবের পটভূমিকা রূপে? যেমন প্রদীপ জ্বালাবার আগে থাকে তার সলতে পাকানোর ইতিহাস, তেমনি এই বিরল-প্রতিভাদীপ্ত জ্যোতিষ্কের জন্মেরও একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

সেই ইতিহাসে প্রবেশ করার আগে আজ ২২শে শ্রাবণে কবির ‘মৃত্যুর পরে’ কবিতাটর একটি অংশে দেখতে পাচ্ছি, গানের সঙ্গে মৃত্যুর কি নিবিড় সম্পর্ক বাসা বেঁধেছিল তাঁর মনে! তিনি বলছেন,

“গুঞ্জরি করুক তান
ধীরে ধীরে করো গান
বসিয়া শিয়রে।
যদি কোথা থাকে লেশ
জীবনস্বপ্নের রেশ
তাও যাক মরে।
তুলিয়া অঞ্চলখানি
মুখ ‘পরে দাও টানি,
ঢেকে দাও দেহ।
করুণ মরণ যথা
ঢাকিয়াছে সব ব্যথা
সকল সন্দেহ।
মৃত্যুর সব যন্ত্রণা জুড়াবে গানের সুরে ।

আজ রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার দিনটিতে শোক যেন আমাদের চিত্তকে অধিকার না করে। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে দেখেছেন ইতিবাচক দৃষ্টিতে। তিনি প্রিয়জনের মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন অনেকবার কিন্তু তাঁর স্থৈর্য কখনত্ত টলেনি। তাঁর দৃষ্টিতে মৃত্যু হল জীবনের সিংহদুয়ার পেরিয়ে, অন্ধকার থেকে আলোকে, দুঃখ থেকে অমৃতে, বন্ধন থেকে মুক্তির পথে যাত্রা। মৃত্যুর মধ্যে জীবনের জয়গানই যে ধ্বনিত , তা তিনি অনুভব করেছিলেন। তাই তিনি গেয়েছেন —

“জীবনে ফুল ফোটা হলে মরণে ফল ফলবে।”

আজ যে প্রভাত হল, সেই প্রভাতে কি কবি আমাদের মধ্যে নেই ? অবশ্যই আছেন। তিনি যে আমাদের আশ্বস্ত করেছন গানের ভিতর দিয়ে —

তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি — আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।”

আজ যখন সারা বিশ্বে জুড়ে অতিমারীর কারণে নিত্যনিয়ত কারো না কারো প্রিয়জন আকস্মিক মৃত্যুর সম্মুখীন তখন তাঁর অমৃতবর্ষী সঙ্গীত আমাদের মনে আশার আলো জ্বালিয়ে রাখুক, এই বিশেষ দিনটিতে এই আমাদের প্রার্থনা।।

Categories Uncategorized

ভারতীয় সঙ্গীত 2

আমাদের দেশে প্রাচীন কাল থেকেই দুই শ্রেণীর সঙ্গীতের অস্তিত্ব দেখা যায় — মার্গ ও দেশী। মার্গ সঙ্গীত বলতে বোঝায় সুসংস্কৃত নিয়মবদ্ধ সঙ্গীত। দেশী সঙ্গীত এক অর্থে আঞ্চলিক সঙ্গীতও বটে। এই গান দেশজ মানুষের মধ্যে প্রচলিত গান। এই দেশী গানই ধীরে ধীরে প্রণালীবদ্ধ হতে হতে মার্গ সঙ্গীতে রূপান্তরিত হতে থাকে। এই পরিবর্তন সমানেই চলেছে, আজও তা অব্যাহত। যেমন, ধ্রুপদ গান এসেছে প্রাচীন প্রবন্ধ গান থেকে। কিন্তু এর মূলেও আছে দেশী সঙ্গীতের উপাদান। ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই গান মন্দিরে মন্দিরে পরিবেশিত হতে আরম্ভ করে। গোয়ালিয়রের রাজা মান সিংহ তোমরের রাজত্বকালে (১৪৮৬ — ১৫১৭ খ্রী) চারটি তুক বা অংশ দ্বারা গঠিত ধ্রুপদ গান এক সুসংহত রূপ ধারণ করে এবং অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রাজা মানের সময়ের পূর্ব থেকেই এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এমনটি ধরে নেওয়া যায়। তবে তাঁর রাজত্বকালে তাঁর নিজের এবং রাজসভাস্থ সঙ্গীত গুণীদের প্রয়াসের ফলেই ধ্রুপদ গানের নবজন্ম ঘটে, এমন অভিমত অনেক পণ্ডিতের। পরিবেশনের ক্ষেত্রে অনেক প্রকার বিধিনিয়ম তৈরি হয়। মুসলমান সাম্রাজ্যের সময়কালে এই গান রাজদরবারে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে — একে বলা হত দরবারী ধ্রুপদ গান। মোগল বাদশাহেরা সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন, যেমন আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরীতে আছে যে আকবরের দরবারে ৩৬ জন সঙ্গীত গুণী ছিলেন। এঁদের মধ্যমণি ছিলেন তানসেন। পরবর্তী সময়েও গুণী সমাবেশ অক্ষুণ্ন ছিল। ঔরঙ্গজেব সঙ্গীত তেমন পছন্দ না করলেও তাঁর দরবারে তাঁর রাজসভায় সঙ্গীত চর্চার প্রথা চলেছিল। মোগল সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার কাল পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।

Categories Uncategorized

ভারতীয় সঙ্গীত 3

আমরা জেনেছি যে অভিজাত ধ্রুপদ শ্রেণীর গান হিন্দু ও মুসলিম, উভয় রাজদরবারেই জনপ্রিয় ছিল এবং দরবারী ধ্রুপদ নামে পরিচিত ছিল। পরে ধীরে ধীরে খেয়াল গানের জন্ম হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ধ্রুপদ তার রাজমর্যাদা হারাতে থাকে। খেয়ালের সৃষ্টি সম্পর্কে একাধিক মত আছে। কারো কারো মতে এক বিশেষ শ্রেণীর প্রবন্ধ গান খেয়ালের উৎস। আবার ধ্রুপদ গানের বিবর্তনের মধ্যেই দিয়েই খেয়াল গান রূপ ধারণ করেছে, এমন মতও আছে। খেয়াল শব্দটি বিদেশী — পারসিক বা আরবিক। এর অর্থ হলো কল্পনা। এই গীতরীতি ধ্রুপদ গানের চাইতে সংক্ষিপ্ততর এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতাও অনেক বেশি। এই রীতির জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুণ্ন যদিও তাতে কালে কালে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি গীতশৈলীর উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন, ঠুমরী, টপ্পা, হোরি, কাজরি, চৈতি, সাবন, ঝুলা, দাদরা ইত্যাদি। এইগুলি আঞ্চলিক বা দেশী সঙ্গীত। ঠুমরী বিকশিত হয় অওয়ধের নবাব ওয়াজেদ আলী শাহর (রাজত্বকাল ১৮৪৭ — ১৮৫৬ খ্রী) দরবারে। টপ্পা গান প্রধানত দুই প্রকার — পশ্চিমী ও পূর্বী। পশ্চিমা টপ্পা ছিল পাঞ্জাবের উষ্ট্রচালকদের গান। অওয়ধের নবাব আসফ-উদ্-দৌল্লার (রাজত্বকাল ১৭৭৫ — ১৭৯৭ খ্রী) অন্যতম সভাগায়ক গুলাম নবী শোরী একে নতুন রূপ দেন এবং এটি উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মর্যাদা লাভ করে। পরে অবশ্য বাঙলা টপ্পা রীতির প্রবর্তন করেন রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু (১৭৪১ — ১৮৩৪ খ্রী)। উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন গীতরীতিগুলির সঙ্গে ঠুমরীর সম্পর্ক আছে। ধ্রুপদ সঙ্গীতের কেন্দ্র ছিল গোয়ালিয়র ও মথুরা-বৃন্দাবন অঞ্চল। খেয়াল গান মূলতঃ ‌মোগল রাজদরবারের সঙ্গীতসভায় সৃষ্ট হলেও অন্যান্য অঞ্চলেও এই গানের চর্চা হয় এবং এর ফলে বিভিন্ন ঘরাণাগুলির জন্ম হয়। হোরি বা ধামার গান ধামার তালে গাওয়া হয়। এর বিষয়বস্তু হল রাধা-কৃষ্ণের হোলি-লীলা। এই গান মথুরা, বারাণসী, এলাহাবাদ প্রভৃতি স্থানে যথেষ্ট প্রচলিত এবং একে উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীত হিসাবে গণ্য করা হয়।

Categories Uncategorized

ভারতীয় সঙ্গীত 1

ভারতীয় সঙ্গীত পৃথিবীর সব চাইতে প্রাচীন সঙ্গীত। ধর্মের সঙ্গে এর নিবিড় বন্ধন। আধ্যাত্মিক সম্পদ যেমন আমরা ধর্মীয় শাস্ত্রগুলির মধ্যে পাই, তেমনি পাই আমাদের সঙ্গীতে। এই সঙ্গীত বিনা মন্দিরে দেবদেবীর আরাধনা সম্পূর্ণ হত না। এখনো তার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে। দক্ষিণ ভারতীয় নৃত্যকলার উৎস হলেন ঈশ্বর। ভারতে মুসলমান আক্রমণের আগে সারা ভারতবর্ষে একই প্রকারের সঙ্গীতশৈলী প্রচলিত ছিল। কিন্তু তারপর মুসলমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে ভারতীয় সঙ্গীতে প্রচুর পরিবর্তন দেখা দিতে লাগল। দক্ষিণ ভারতে এই আক্রমণ তেমন ছাপ ফেলতে পারে নি। সেই কারণে তারা তাদের ঐতিহ্য অনেকটাই বজায় রাখতে পেরেছিল। কিন্তু উত্তর ভারতের কাহিনী অন্যরকম। মুসলিম প্রভাবে জনজীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটতে থাকে। দেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তি টলে যায়। আর ভারতীয় ধর্মসাধনার যে প্রধান অঙ্গ সঙ্গীত, তার চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। উপরন্তু, পারস্য দেশ থেকে নিয়ে আসা সঙ্গীতের সঙ্গে মিশে যায় প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত। এই সঙ্গীতের মূল কথা ছিল ভক্তি, সেই সম্পদ আর বজায় রাখা যায় নি। এই মিশ্রণের ফলে জন্ম নেয় আধুনিক হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। এর গতি প্রকৃতি একেবারেই ভিন্ন।

ভারতে মুসলমান আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত মোটামুটি একই প্রকারের সঙ্গীতশৈলী প্রচলিত ছিল। মনে রাখতে হবে যে, আজকের পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সেকালে ভারতবর্ষের অঙ্গীভূত ছিল। অবশ্য চিরকালই বহু রাজত্বে বিভক্ত ছিল। এই দেশ কোনদিনও এক পতাকাতলে সমবেত ছিল না। তা সত্ত্বেও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একটি সাম্যভাব লক্ষ্য করা যায়। সারা ভারতবর্ষে উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত সঙ্গীত একই ধারায় প্রবাহিত হত বলে মনে হয় — যাকে প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত অথবা হিন্দু সঙ্গীত বলা যেতে পারে। এই সঙ্গীত ছিল প্রধানত মন্দির-কেন্দ্রিক ও তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেবসেবা। কোনও দেবদেবীর আরাধনা সঙ্গীত বিনা সম্পূর্ণ হত না। ব্রাহ্মণ শ্রেণীর উপর দায়িত্ব ছিল এই সঙ্গীতের চর্চা, শুদ্ধতা রক্ষা, গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শিক্ষাদান ও সঙ্গীত শাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ রচনা। অতএব দেখা যায়, ধর্ম ছাড়া সঙ্গীতের কথা ভাবা যেত না। মন্দির ও তার পুরোহিত শ্রেণীর আর্থিক এবং অন্যান্য দায়িত্ব নিতেন দেশের রাজা। সুতরাং মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত সঙ্গীতবিশারদ ব্রাহ্মণেরা জীবন উৎসর্গ করতেন সঙ্গীত সাধনায়। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কোন আর্থিক বিনিময় থাকত না; বিশুদ্ধ রীতি বজায় রাখা ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। শিষ্য-প্রশিষ্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য এই সঙ্গীত রক্ষিত হওয়ার প্রথা ছিল। নানা কারণে সঙ্গীতশাস্ত্র গ্রন্থ রচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

আমার এই লেখায় আমি কোনো বিশদ বিবরণের মধ্যে যাচ্ছি না কারণ সাধারণ পাঠক ভারতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে তেমন আগ্রহী নাও হতে পারেন। গল্পচ্ছলে লিখলে তা হয়তো তাঁদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে।
আমরা আশাকরি বোঝাতে পেরেছি যে মুসলমান আক্রমণের পরবর্তী সময়ে ভারতে দুটি ভিন্ন সঙ্গীত পদ্ধতির অস্তিত্ব চোখে পড়ে। দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত ও উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত। দক্ষিণ ভারতীয় বা কর্ণাটিক সঙ্গীতধারা হয়তো বা প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীতের ছায়া বহন করে। আর উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত, যাকে আমরা সাধারণ ভাবে হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বলে জানি, তা কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন সৃষ্টি। একদিকে সুরের ক্ষেত্রে সেই সময়ে প্রচলিত ভারতীয় রাগসমূহের সঙ্গে পারসিক সঙ্গীত থেকে আসা মোকামগুলির অবাধ মিশ্রণ ঘটতে আরম্ভ করে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় রাগের রূপবর্ণনার রীতি ও পরিবেশনগত পদ্ধতিতেও প্রভূত পরিবর্তন আসতে থাকে। যেমন, পূর্বকালে রাগের পরিচায়ক হিসাবে মূর্ছনার গুরুত্ব ছিল। কিন্তু হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করল রাগে ব্যবহৃত স্বরগুলির আরোহণ, অবরোহণ ও পকড়। পকড় শব্দটি বিদেশী। এর অর্থ হলো যথাসম্ভব কম স্বর ব্যবহারের মাধ্যমে রাগের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে প্রকাশ করা। পণ্ডিত ভাতখণ্ডের বিখ্যাত সঙ্গীত-সঙ্কলন গ্রন্থ ‘ক্রমিক পুস্তক মালিকা’য় এই নতুন প্রথাটির অজস্র উদাহরণ মেলে। অপরদিকে পূর্বকালে রচিত সঙ্গীতশাস্ত্র গ্রন্থগুলিতে মূর্ছনা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।

আমাদের আগ্রহ জাগে যে কি ধরণের গীতরীতি মুঘল বাদশাহের দরবারে পরিবেশিত হত; তাদের অনুষঙ্গ যন্ত্রই বা কি প্রকারের ছিল। প্রথম দিকে ধ্রুপদ নামে এক প্রকার প্রবন্ধ শ্রেণীর গীতশৈলী সর্বাধিক সম্মানের আসনে ছিল। বহু পূর্বে এই ধ্রুপদ ছিল লৌকিক সঙ্গীত। তার বিবর্তনের ইতিহাস যথেষ্ট জটিল। বীণা ও মৃদঙ্গ প্রাচীন ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র। সম্ভবত এইগুলি অনুষঙ্গ যন্ত্র হিসাবে প্রচলিত ছিল। পরে কখনো ইতিহাসের প্রসঙ্গে যাব। এই শ্রেণীর সঙ্গীতের উৎস ছিল ভারতে প্রচলিত সঙ্গীত।
পরের দিকে খেয়াল গীতরীতি জন্ম নেয় এবং অচিরেই এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে ধ্রুপদ গান তার সম্মান ও গুরুত্ব ক্রমশই হারাতে থাকে। বর্তমান কালেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে খেয়াল গানই সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত রীতি; ধ্রুপদ গান প্রায় বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যাচ্ছে। যাই হোক, খেয়াল একটি পারসিক শব্দ, এর অর্থ হলো কল্পনা। অতএব আমরা ধরে নিতে পারি যে এই গীতরীতির উপর পারস্য দেশের সঙ্গীতের প্রভাব আছে। কল্পনা শব্দটি থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, ধ্রুপদ গানের চাইতে এই গানে গায়কের স্বাধীনতা অনেক বেশি ছিল। ধ্রুপদী সঙ্গীত গাম্ভীর্য-প্রধান, কথার অংশ বিস্তৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। সেই তুলনায় খেয়াল গানের রচনা সংক্ষিপ্ত ও পরিবেশনের ভঙ্গী লঘুতর। এই গানের সাধারণ অনুষঙ্গ যন্ত্র সারেঙ্গী ও তবলা। আজকাল হারমোনিয়ামও ব্যবহৃত হয়। এর ইতিহাসও চিত্তাকর্ষক।
আরো কিছু গীতরীতি ছিল কিন্তু সেগুলি এককভাবে রাজদরবারে গীত হত না। এগুলি ছিল হালকা তালে নিবদ্ধ সমবেত কন্ঠের সঙ্গীত। সবচাইতে বিখ্যাত ছিল কাওয়ালি গান যার জনপ্রিয়তা আজও বজায় আছে। সূফী সাধকদের গানেও এই রীতির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। কাওয়ালি নামে একটি তালও জনপ্রিয় ছিল। এটির সঙ্গে কাহারবা তালের মিল আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানে এই কাওয়ালি তাল ব্যবহার করেছেন। ৬০/৭০ এর দশকে হিন্দী চলচ্চিত্রে এই কাওয়ালি গান তার জনপ্রিয়তার জন্য প্রচুর পরিমাণে শোনা যেত।

এই মিশ্র শ্রেণীর সঙ্গীতের সঙ্গে একটি নাম মিশে আছে। সেই নামটি হল আমীর খুস্রৌ।