আজ ২২শে শ্রাবণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস (৭ই আগস্ট , ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দ; ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। ভরা শ্রাবণে তিনি চলে গেলেন। কি রেখে গেলেন তিনি আমাদের নিত্যদিনের জীবনে !
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের ‘পরে, বুকের ‘পরে।।
— এর থেকেই তো আমরা প্রাত্যহিক সুখ-দুঃখকে অতিক্রম করে বেঁচে থাকার শক্তি সংগ্রহ করছি। তাই ‘সুরে ও কথায়’ রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেতে চেষ্টা করব এই লেখার মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে।
বাঙালী জাতির অসীম সৌভাগ্য যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মেছিলেন কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরপরিবারে (জন্ম ৭ই মে, ১৮৬১; ২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)। কিন্তু এই পরিবারটি এল কোথা থেকে, কিভাবে গড়ে উঠল এই ঐতিহ্যবাহী ঠাকুর পরিবারটি, রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাবের পটভূমিকা রূপে? যেমন প্রদীপ জ্বালাবার আগে থাকে তার সলতে পাকানোর ইতিহাস, তেমনি এই বিরল-প্রতিভাদীপ্ত জ্যোতিষ্কের জন্মেরও একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে।
সেই ইতিহাসে প্রবেশ করার আগে আজ ২২শে শ্রাবণে কবির ‘মৃত্যুর পরে’ কবিতাটর একটি অংশে দেখতে পাচ্ছি, গানের সঙ্গে মৃত্যুর কি নিবিড় সম্পর্ক বাসা বেঁধেছিল তাঁর মনে! তিনি বলছেন,
“গুঞ্জরি করুক তান
ধীরে ধীরে করো গান
বসিয়া শিয়রে।
যদি কোথা থাকে লেশ
জীবনস্বপ্নের রেশ
তাও যাক মরে।
তুলিয়া অঞ্চলখানি
মুখ ‘পরে দাও টানি,
ঢেকে দাও দেহ।
করুণ মরণ যথা
ঢাকিয়াছে সব ব্যথা
সকল সন্দেহ।
মৃত্যুর সব যন্ত্রণা জুড়াবে গানের সুরে ।
আজ রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার দিনটিতে শোক যেন আমাদের চিত্তকে অধিকার না করে। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে দেখেছেন ইতিবাচক দৃষ্টিতে। তিনি প্রিয়জনের মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন অনেকবার কিন্তু তাঁর স্থৈর্য কখনত্ত টলেনি। তাঁর দৃষ্টিতে মৃত্যু হল জীবনের সিংহদুয়ার পেরিয়ে, অন্ধকার থেকে আলোকে, দুঃখ থেকে অমৃতে, বন্ধন থেকে মুক্তির পথে যাত্রা। মৃত্যুর মধ্যে জীবনের জয়গানই যে ধ্বনিত , তা তিনি অনুভব করেছিলেন। তাই তিনি গেয়েছেন —
“জীবনে ফুল ফোটা হলে মরণে ফল ফলবে।”
আজ যে প্রভাত হল, সেই প্রভাতে কি কবি আমাদের মধ্যে নেই ? অবশ্যই আছেন। তিনি যে আমাদের আশ্বস্ত করেছন গানের ভিতর দিয়ে —
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি — আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।”
আজ যখন সারা বিশ্বে জুড়ে অতিমারীর কারণে নিত্যনিয়ত কারো না কারো প্রিয়জন আকস্মিক মৃত্যুর সম্মুখীন তখন তাঁর অমৃতবর্ষী সঙ্গীত আমাদের মনে আশার আলো জ্বালিয়ে রাখুক, এই বিশেষ দিনটিতে এই আমাদের প্রার্থনা।।