আমরা জেনেছি যে অভিজাত ধ্রুপদ শ্রেণীর গান হিন্দু ও মুসলিম, উভয় রাজদরবারেই জনপ্রিয় ছিল এবং দরবারী ধ্রুপদ নামে পরিচিত ছিল। পরে ধীরে ধীরে খেয়াল গানের জন্ম হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ধ্রুপদ তার রাজমর্যাদা হারাতে থাকে। খেয়ালের সৃষ্টি সম্পর্কে একাধিক মত আছে। কারো কারো মতে এক বিশেষ শ্রেণীর প্রবন্ধ গান খেয়ালের উৎস। আবার ধ্রুপদ গানের বিবর্তনের মধ্যেই দিয়েই খেয়াল গান রূপ ধারণ করেছে, এমন মতও আছে। খেয়াল শব্দটি বিদেশী — পারসিক বা আরবিক। এর অর্থ হলো কল্পনা। এই গীতরীতি ধ্রুপদ গানের চাইতে সংক্ষিপ্ততর এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতাও অনেক বেশি। এই রীতির জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুণ্ন যদিও তাতে কালে কালে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি গীতশৈলীর উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন, ঠুমরী, টপ্পা, হোরি, কাজরি, চৈতি, সাবন, ঝুলা, দাদরা ইত্যাদি। এইগুলি আঞ্চলিক বা দেশী সঙ্গীত। ঠুমরী বিকশিত হয় অওয়ধের নবাব ওয়াজেদ আলী শাহর (রাজত্বকাল ১৮৪৭ — ১৮৫৬ খ্রী) দরবারে। টপ্পা গান প্রধানত দুই প্রকার — পশ্চিমী ও পূর্বী। পশ্চিমা টপ্পা ছিল পাঞ্জাবের উষ্ট্রচালকদের গান। অওয়ধের নবাব আসফ-উদ্-দৌল্লার (রাজত্বকাল ১৭৭৫ — ১৭৯৭ খ্রী) অন্যতম সভাগায়ক গুলাম নবী শোরী একে নতুন রূপ দেন এবং এটি উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মর্যাদা লাভ করে। পরে অবশ্য বাঙলা টপ্পা রীতির প্রবর্তন করেন রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু (১৭৪১ — ১৮৩৪ খ্রী)। উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন গীতরীতিগুলির সঙ্গে ঠুমরীর সম্পর্ক আছে। ধ্রুপদ সঙ্গীতের কেন্দ্র ছিল গোয়ালিয়র ও মথুরা-বৃন্দাবন অঞ্চল। খেয়াল গান মূলতঃ ‌মোগল রাজদরবারের সঙ্গীতসভায় সৃষ্ট হলেও অন্যান্য অঞ্চলেও এই গানের চর্চা হয় এবং এর ফলে বিভিন্ন ঘরাণাগুলির জন্ম হয়। হোরি বা ধামার গান ধামার তালে গাওয়া হয়। এর বিষয়বস্তু হল রাধা-কৃষ্ণের হোলি-লীলা। এই গান মথুরা, বারাণসী, এলাহাবাদ প্রভৃতি স্থানে যথেষ্ট প্রচলিত এবং একে উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীত হিসাবে গণ্য করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

You may use these <abbr title="HyperText Markup Language">HTML</abbr> tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*